২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:৩৬

জেলখানায় বসে ভোট ডাকাতির খবর শুনেছি : ব্যারিস্টার মইনুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, ব্যর্থ স্বাধীনতা সবার জন্যই কলঙ্ক। জেলখানায় বসে ভোট ডাকাতির খবর শুনেছি। ১৭ কোটি মানুষকে ভীতির মধ্যে রেখে দেশে চলছে এখন মুষ্টিমেয় সুবিধাবাদীর সরকার। তাদের কাছে মিথ্যাই সত্য, দুর্নীতিই সততা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দি ঢাকা ফোরাম’ আয়োজিত গণতন্ত্র ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বেম গোলটেবিল বৈঠকে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, স্বাধীন দেশের সরকার হবে জনগণের অধিকার রক্ষার সুশাসন। নির্বাচন হবে বৈধতার ভিত্তিতে। কিন্তু জেলে থেকে আমাকে শুনতে হলো ভোট ডাকাতির কাহিনী। দেশে ভোটের রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে। ভোট ডাকাতি করতে পুলিশি শক্তির অপব্যবহার করা হয়েছে। জনগণ এখন প্রশাসনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। ১৭ কোটি মানুষ অন্যায় অবিচারের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। দেশের রাষ্ট্রীয় শক্তির ভয়ভীতির আতঙ্কে আমরা রয়েছি। ভোটাধিকারের দাবি নাগরিকত্বের দাবি। ভোটাধিকার রক্ষা করতে না পারার ব্যর্থতা দলীয় রাজনীতির ব্যর্থতা নয়, আমাদের স্বাধীনতার ব্যর্থতা। স্বাধীনতার অর্থ স্বাধীনভাবে সরকার গঠনের স্বাধীনতা, দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার। স্বাধীনতা জনগণের সরকারের নয়। সরকারের থাকতে হবে জনগণের প্রতি দায়িত্ব্ পালনের দায়বদ্ধতা।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট নড়বড়ে অবস্থায় বিচার ব্যবস্থাকে কোনোভাবে ধরে রেখেছে। নিম্ন আদালতের জজ-বিচারকদের চাপের মুখে রাখতে সরকারের অসুবিধা হচ্ছে না। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব নিজেই অহরহ ফোন করেন জজ-ম্যাজিস্টেটদের কারণীয় নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। জনগণের সুবিচার পাবার অহয়াত্বের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, সরকার এতো সাধু হলে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকতে হতো না। পুলিশি মামলা দিতে সরকারকে আইনের কথা ভাবতে হয় না। সরকারই আইন। জামিন না পেলেই লক্ষ্য হাসিল। তিনি বলেন, ভয়-ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা আতঙ্কের মধ্যে জনসমস্টিকে রাখা স্বাধীনতা নয়। দেশে চলছে মুষ্টিমেয় সুবিধাবাদীদের সরকার। সরকার পরিচালনায় সেই গোষ্ঠীই প্রভাবশালী যারাই জনগণকে নির্বাচন থেকে বঞ্চিত করতে সাহায্য করছে। তাদের কাছে মিথ্যাই সত্য, দুর্নীতিই সততা। তাদের উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন। জিডিপি কেন্দ্রীক উন্নয়নের বড় বড় দাবির সমর্থনে তথ্য প্রকাশে সরকারের অস্বীকৃতি বোধগম্য।

তিনি বলেন, জনগনের ভোট হরন করে যে সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে হয় সে সরকারের ব্যর্থতার কথা, গণ-ভীতির কথা অন্যদের বলতে হয় না। জনগণের ভোটাধিকার অস্বীকার করাই সরকারের চরম ব্যর্থতার স্বীকৃতি। হাফিজ উদ্দিন বলেন, দেশে ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে তা কলংকজনক নির্বাচন। ডাকসুতেও একই কায়দায় নির্বাচন হয়েছে। দেশের গুটিকতক এর প্রতিবাদ করলেও আমরা এর প্রতিবাদ করতে পারিনি। মূলত মানুষের মনে এখন ভয় ঢুকে গেছে। টকশোতে সত্য কথা বললে এখন আর তারা ডাকে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখন তেমন কোন আভাস দেখা যাচ্ছে না। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে সেটা হচ্ছে না। তবে সুদানে যেভাবে ৩০ বছর পর পরিবর্তন এসেছে আমাদের দেশে ১৫ বছরের শাসন চলছে। আরো হয়তো ১৫ বছর পর পরিবর্তন আসতে পারে। এজন্য গণআন্দোলন প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষ এক সময় অনেক প্রতিবাদী ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষের সেই প্রতিবাদী মনোভাব এখন কোথায় গেল? মানুষ কি নির্জিব হয়ে গেল?

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সামষ্টিক সূচকের ভিত্তিতে দেশের উন্নয়ন দেখানো হচ্ছে। কিন্ত দিনকে দিন মানুষে মানুষে বৈষম্য বেড়েই চলেছে। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষ উন্নয়নের সুবিধা থেকে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কারণ এখন জনগণ নয় পুঁজিই ক্ষমতার উৎস হয়ে গেছে। দেশে সুশাসন নেই, জবাবদিহিতার প্রচন্ড অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। ভোটধিকার এখন ক্ষমতা ও অর্থের কাছে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। দেশের এ সংকট থেকে মুক্তি পেতে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়ন এর পথে এগিয়ে যেতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। মানুষ এখন ভয়ে কথা বলতে পারে না।

প্রকাশ :এপ্রিল ২৮, ২০১৯ ১০:১০ পূর্বাহ্ণ