নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আত্মজীবনী প্রকাশের পেছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে জানি, কিন্তু আমি আপনাদের বলবো না। বরং আমি চাই এই বই প্রকাশের পেছনে কারা রয়েছে তা আপনারা বের করুন।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে তার অংশগ্রহণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিচারপতি সিনহার একটি আত্মজীবনী সম্প্রতি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এতে সাবেক প্রধান বিচারপতি তার পদত্যাগের বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেছেন।
‘এ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল’, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক এই বইয়ের কপিরাইট হচ্ছে ললিতমোহন-ধনাবাতি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের নামে। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে এই বইয়ের প্রকাশনা উৎসবের কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি কতবার বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে আনা হয় তা সাংবাদিকদের খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এই বই প্রকাশনায় কারা অর্থ দিয়েছে এবং আপনাদের মতো কোনো সংবাদপত্রের সাংবাদিক এর সঙ্গে জড়িত কি-না এবং কী পরিমাণ অর্থ দিয়েছে তা অনুগ্রহ করে উন্মোচন করুন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো বড় আইনজীবী এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংশোধন করে দিয়েছেন কি-না অথবা কোনো সংবাদপত্র অথবা এর মালিক এর (বইয়ের) পৃষ্ঠপোষক কি-না তা আপনারা খুঁজে বের করুন।’
যুক্তরাষ্ট্রে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে একটি বাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে বাড়ি কেনা কঠিন কিছু নয়। বিপুল দামের কারণে বাংলাদেশে কেনা কঠিন। অর্থ জমা করলে যুক্তরাষ্ট্রে যে কোনো ব্যক্তি বাড়ি কিনতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে এবং কীভাবে এই বাড়ি ক্রয় করেছে সে ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আপনারা খুঁজে বের করুন এবং তথ্য দিন। যদি কোনো ব্যক্তি এ ব্যাপারে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের সময় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা হতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিরোধী দলীয় নেত্রীর (রওশন এরশাদ) সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। তারা যদি চান আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল রাজনৈতিক দল যদি চায় তাহলে আমরা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি। তারা ক্ষমতাসীন অথবা বিরোধী দল কিনা সেটা কোনো বিষয় না। তবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে এখানে কোনো সংজ্ঞা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে এদিন সকালে নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তার সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে এবং রোহিঙ্গা ইস্যু ও নির্বাচন বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠককালে আমরা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। একনেক ইভিএম প্রকল্প অনুমোদন করেছে এবং আমরা তা ব্যবহার করতে চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকুক এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ সময় মঞ্চে ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ-বিন-মোমেন সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।