২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:৩৫

নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হলে আ’লীগের সমস্যা কোথায় : আমীর খসরু

মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা বুঝতে পারছি না- আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমস্যা কোথায়? সেনা মোতায়েনে তাদের এতো ভয় কিসের?
খসরু বলেন, দেশের যেকোনো ধরনের দুর্যোগ থেকে উত্তরণে সেনাবাহিনী অগ্রণী ভূমিকা করে আসছে। তাহলে একটি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে এই বাহিনীর ভূমিকা থাকলে তাতে তাদের ক্ষতি কী।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীল খসরু মাহমুদ চৌধূরী বলেন, আগামী নির্বাচনে সেনা বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারটি সরকারের কাছে এত স্পর্শকাতর হয়ে গেল কেন- তা দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে। কারণ সেনাবাহিনী মোতায়েন করে এতগুলো নির্বাচন হলো, তার একটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। সেনাবাহিনী ছাড়া নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলো। তাহলে তাদের তদারকিতে নির্বাচনের বিষয়টি স্পর্শকাতর হলো কেন?
খসরু বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে সেনাবাহিনী স্পর্শকাতর। কারণ, তাঁরা ভয় পাচ্ছেন নিজেদের দুর্বলতার কারণে। সেনাবাহিনীর প্রতি কোনো রাজনৈতিক দলের দুর্বলতা থাকলে বুঝতে হবে তাঁরা দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি অন্যায় করছেন। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন করলে তাদের ভয় হতো না। সেনাবাহিনী দেশের যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারলে। ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার মতো এত বড় বিপদ বা দুর্যোগে কেন পারবে না। এমন দুর্যোগে সেনাবাহিনীর ভূমিকা থাকলে তাদের সমস্যা কোথায়? নিশ্চয়, ‘ডাল মে কুচ কালা হয়া’। কোনো সমস্যাতো অবশ্যই আছে, তা না হলে তাদের এতো ভয় কেন?
আগামী সংসদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষ নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রত্যাশা করছে বলেও দাবি করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সরকার চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে উন্নয়নের মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, তারা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে উন্নয়নের কথা বলে যাচ্ছে। অধিকার কেড়ে নিয়ে যখন বারবার উন্নয়নের কথা বলতে থাকে তখন আপনাকে বুঝতে হবে এটা একটা নিশ্চিত স্বৈরাচার সরকার। যুগে যুগে এটা হয়ে আসছে। উন্নয়নের কথা বিক্রি করে ক্ষমতা ধরে রাখা।
সরকার উন্নয়নের নামে ধোঁকা দিচ্ছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, উন্নয়নের যে মূলভিত্তি সেগুলো হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। গত আট বছর আগে দেশের মানুষের যে জীবনযাত্রার মান ছিল আজকে সেই অবস্থান থেকে ৯-১০ শতাংশ কমে গেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে আমরা আজ সর্বনিম্ন। আজকে দেশে সাড়ে চার কোটি মানুষ বেকার। যাদের চাকরি আছে তাদের জীবনযাত্রার মানও কমে গেছে। বাংলাদেশে আজকে ব্যক্তিগত কোনো বিনিয়োগ নেই। বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, সরকারি বিনিয়োগে যে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে এর টাকাটা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই টাকা সুইস ব্যাংকে যাচ্ছে, লন্ডনে, মায়েশিয়া, কানাডায়ও যাচ্ছে, সেখানে বাড়ি গড়ছে। এগুলো সব করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ব এখন ওপেন। কার বাড়ি কোথায় সব জানা যায়। এগুলো লুকানো সম্ভব নয়। পানামা পেপারসে তাদের নাম এসেছে। ব্যাংকগুলো খারাপ পরিস্থিতি করে রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে দুই বছর আগে, এখনো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করছে না। কারণ, এই টাকা চুরি করার পেছনে তাদের লোকজন জড়িত।
সরকার প্রবৃদ্ধি নিয়ে মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলে বিষয়টি তপ্রন্তর প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, যে দেশে মানুষের চাকরি নেই, ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে এবং যাচ্ছে- এই পরিস্থিতিতে যদি বলেন ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তাহলে এর চেয়ে মিথ্যাচার আর কিছুই হতে পারে না। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বলছে, এই খবর সত্যি নয়। কারণ অর্থনীতির মাঠপর্যায়ের যে খবর তার সঙ্গে এই প্রবৃদ্ধির খবরের মিল নেই। এটি বানোয়াট। যখন সরকার পরিবর্তন হবে এটার তদন্ত হওয়া উচিত যে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে মিথ্যা প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে।
‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এস এম হাসান তালুকদার, জিনাফের সভাপতি লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার, বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :এপ্রিল ২১, ২০১৮ ৭:৫৯ অপরাহ্ণ