১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:০৫

ত্রাণের ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৪ টাকায়

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যুষিত টেকনাফের বাজারে ও বিভিন্ন এলাকায় ১২০ টাকা দামের প্রতি কেজি মুশরির ডাল বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকায়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ত্রাণের জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে খুব কম দামে। এসব ডাল বিক্রি করছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের এসব ত্রাণ বাজারে এনে ব্যবসার জন্য ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। তারা ক্যাম্পের ভেতর থেকে কমমুল্যে নামি-দামি ব্র্যান্ডেরসহ সব ধরনের ত্রাণ সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ঠদের দাবি রোহিঙ্গাদের কাছে বেশি পরিমান ত্রাণ মজুদ আছে। তাই তারা ত্রাণ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি সহযোগিতার পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকায় তারা এসব কম মুল্যে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাদের দাবি ত্রাণ পর্যাপ্ত থাকলে তা ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়দের মাঝে বিতরণ করা হোক।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা সরকারি বেসরকারি সহযোগিতার ত্রাণ এখন টেকনাফ উপজেলায় সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ির অলিগলিতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের জিনিসপত্র। সোমবার সকালে টেকনাফ বাজারে বিভিন্ন প্রকার ত্রাণ নিয়ে আসেন আমিনা নামের এক মহিলা। ওই মহিলা বিক্রেতা বলেন তিনি রোহিঙ্গা। ৬ মাস আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানান, সেলাই কাজ করে কিছু আয় হয় তার। এখন সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন ত্রাণের জিনিস এনে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।

টেকনাফ বাজারের ব্যবসায়ী কামাল মিয়া বলেন আমি ১ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে স্টিলের ২ টি পাতিল, ৬ টি প্লেট, ৬ টি গ্লাস, ১২ টি চামচ, ১ টি বড় চামচ কিনেছি। বিক্রেতা মহিলা ২ হাজার টাকা দাম চেয়েছিল। আমি দরদাম করে ১ হাজার ৩০০ টাকায় নিয়েছি। একই সময় টেকনাফের লামা বাজারে গিয়ে দেখাগেছে আরেক রোহিঙ্গা মহিলা ২টি কম্বল, ৫ কেজি ডাল, ৫ কেজি তেল বিক্রি করেছেন মাত্র ৬০০ টাকায়। সাধারণত যে ডাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১২০ টাকায়, সেই ডালের সাড়ে ৫ কেজির পেকেট রোহিঙ্গারা বিক্রি করছেন মাত্র ১৩০ টাকায়। রোহিঙ্গারা এছাড়াও বিক্রি করছেন বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির প্রসাধন সামগ্রী, কম্বল, টুটপেস্ট, ব্রাশ, সাবান, পাতিল, বাসন-কোসন, বালতি, ডাল, আলু, লবন ও কাপড়-চোপড় ইত্যাদি।

এব্যাপারে টেকনাফ পৌরসভার নাফ পেপার বিতানের স্বত্বাধিকারী আবদুল গনি বলেন, টেকনাফ বাজার সব সময় রোহিঙ্গাদের ত্রাণে ভরপুর থাকে। বিশেষ করে নামিদামি কোম্পানির প্রসাধন সামগ্রী, চাল, ডাল, শিশু খাদ্য, বিভিন্ন তেরপাল, পলিথিন, টিন, কাপড় ইত্যাদি। এখানে আবার দেখছি কিছু মানুষ আছে যারা আগে থেকেই রোহিঙ্গা। কিন্তু এখন স্থায়ী হয়ে গেছে। তারা ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে সেসব জিনিস পত্র এনে বাড়তি দামে বাইরে বিক্রি করছে। তিনি বলেন, ইদানিং তাদের দেখাদেখি অনেকে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। তিনিও দাবি করেন সরকারের উচিত হবে রোহিঙ্গাদের অতিরিক্ত ত্রাণ না দিয়ে তাদের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় মানুষজনকে ত্রান সহায়তা করা।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিক্রি করার ঘটনা ঘটছে শুনলাম। তারা অতিরিক্ত ত্রাণ পাচ্ছে, তাই বাইরে বিক্রি করছে। আবার অনেক কাঁচা জিনিস পত্র থাকে যা বিতরণ করতেই হয়। আর প্রথম দিকে অনেক ত্রাণ এসেছে, এছাড়াও প্রথম দিকে বিভিন্ন এনজিওসহ দেশি বিদেশি সংস্থার সহযোগিতা অব্যাহত ছিল। তাই রোহিঙ্গাদের মাঝে অতিরিক্ত ত্রাণ হয়ে গেছে। সে কারনে অনেকে ত্রাণ বাইরে বিক্রি করছিল। এটা রোধ করার জন্য ত্রাণ বিতরণকারীদের সমন্বয় করা দরকার।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :জানুয়ারি ১৬, ২০১৮ ৪:৪০ অপরাহ্ণ