জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
ধানের বাজার এবার চড়া। এরপরও উত্তরাঞ্চলের শস্য উদ্বৃত্ত জেলা জয়পুরহাটের কৃষদের মুখ ভার। কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জেলার অধিকাংশ কৃষক এবার আমনের আশানুরূপ ফলন পাননি। ফলে অনেকেই উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কৃষকেরা জানান, জেলার অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার মাঠ ও নদী তীরবর্তী আমন ক্ষেতগুলো এবার আকস্মিক বন্যায় তিন থেকে চার সপ্তাহ নিমজ্জিত ছিল। এর সঙ্গে অক্টোবরের শেষদিকে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ধানের গাছ মাটিতে শুয়ে পড়ে।
এর ফলে ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিঘাপ্রতি ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১০ মণ ধান হয়েছে। অথচ প্রতিবিঘায় কৃষকদের এলাকাভেদে উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। তাই ধানের মূল্য বেশি হলেও এবার এসব কৃষকরা লাভের টাকা ঘরে নিতে পারছেন না। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জাতভেদে আমন মোটা ধান প্রতিমণ ৮৫০ থেকে ৮৭৫ টাকা এবং চিকন ধান ৯৬০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। যে কৃষকের বিঘায় আমনের ৭ মণ ফলন হয়েছে, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী তিনি ধান বিক্রি করে পাচ্ছেন ৬ হাজার ১২৫ টাকা (৮৭৫ টাকা দরে)। অথচ তিনি ধান উৎপাদনে খরচ করেছেন প্রায় ৬ হাজার টাকা। যার উৎপাদন ১০ মণ হয়েছে, তিনি আসল টাকা ঘরে তুলতে পারছেন। কিন্তু, এতে তার এতদিনের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হতে বসেছে।
চলতি মৌসুমে জেলায় ৭২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার বনখুর গ্রামের কৃষক ও শহীদ জিয়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম চৌধুরী তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী তাজপুর গ্রামের মাঠে ১০০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলেন। তিনি জানান, বিঘাপ্রতি ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১০ মণ ধান হয়েছে তার। মোটা জাতের আমন ৮৭০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। একই তথ্য দিয়েছেন হালট্রি গ্রামের কৃষক কাছাবুল ইসলাম, মাদারগঞ্জের আব্দুল হান্নান, আওয়ালগাড়ি গ্রামের জয়নাল অবেদিন, হরিপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ, ভিকনি গ্রামের আকরাম হোসেন, শান্তা গ্রামের মোক্তার হোসেন প্রমুখ।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কৃষকদের এসব তথ্য মানতে নারাজ। অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুধেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জেলার ৭০ শতাংশ ক্ষেতের আমন ধান কাটা হয়েছে। সব ধান কাটা শেষ হওয়ার আগে গড় উৎপাদনের (ফলন) সঠিক হিসাব দেওয়া সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে ৭০ শতাংশ ক্ষেতের যে ধান কাটা হয়েছে, তার ওপর মোটামুটি হিসাবে করে প্রতিবিঘায় ১৬/১৭ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে।’
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

