২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:১৬

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চেয়েছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চেয়েছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত দলিলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে শুরু এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করার কথা বলা হলেও, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, এ প্রক্রিয়া শেষ করার সময়সীমা বলা সম্ভব নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চেয়েছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’।
শনিবার ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রথম দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত দলিলের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকেই বলে আসছিলো, সাম্প্রতিক সময়ে যে ছ’লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদেরকে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যাতে ১৯৯২ সালের চুক্তির অনুসরণ করা না হয়। তবে দেখা গেল সেই চুক্তির অনুসরণেই এবারও মিয়ানমারের সাথে বোঝাপড়ায় সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। আর মিয়ানমারের ইচ্ছা অনুযায়ী ৯২-এর চুক্তির অনুসরণে এবারের সমঝোতাটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শুরুতে ‘সমঝোতা চুক্তি’ বা ‘এমওইউ’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও একে মূলত ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী শনিবার জানিয়েছেন, “মিয়ানমার শুরুতে সমঝোতা বলেছিল এবার তারাই এর নাম দিয়েছে অ্যারেঞ্জমেন্ট।”
এই অ্যারেঞ্জমেন্ট মেনে চলার ব্যাপারে কোনও আইনি বাধ্য-বাধকতা আছে কি-না জানতে চাইলে মি. আলী বলেন, “নিশ্চয়ই আছে।”
তবে এর বিস্তারিত উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, “অনেক আন্তর্জাতিক আইন থাকলেও তার লঙ্ঘন হচ্ছে। আইন কোনো রাষ্ট্র মানছে কি-না সেটাই বড় ব্যাপার” বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই চুক্তি অনুযায়ী গত ৯ই অক্টোবর ২০১৬ এবং এ বছরের ২৫শে আগস্টের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে শুধু তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার।
মন্ত্রী জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় রোহিঙ্গাদেরকে সেখানে ফিরে গিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে সাময়িক সময়ের জন্য থাকতে হবে। তিনি বলেন, রাখাইনে অস্থায়ী আবাস নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীন ও ভারতকে অনুরোধ করা হয়েছিলো। তখন বেইজিং ও দিল্লির কাছ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ এই বিষয়টি মিয়ানমারকেও অবহিত করেছে বলে মি. আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ তো বহু পক্ষকে সাথে নিয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল – সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমার ওই চুক্তি (১৯৯২) অনুসরণ করতে চায় বলে সেভাবেই করা হয়েছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। এর খুঁটিনাটি, ত্রুটি-বিচ্যুতি, এটা-ওটা নেই, কেন নেই, কি হবে—এসব কথা বলে তো কোনও লাভ নেই। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল, রোহিঙ্গাদের তাঁরা ফেরত নিতে চেয়েছে।”
মিয়ানমারের সঙ্গে এই সমঝোতার ব্যাপারে মন্ত্রী নিজে সন্তুষ্ট কি-না এবং এখানে দেশের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে – – এমন বিতর্কের ব্যাপারে তার কি মত? এই প্রশ্ন করা হলে মি. আলী বলেন, তিনি ‘সন্তুষ্ট’ আর স্বার্থ উপেক্ষা করার বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি হাস্যকর মন্তব্য।”
মন্ত্রী তখন সাংবাদিকদের উল্টো প্রশ্ন করেন, “স্বার্থ কে ঠিক করে? যে সরকার ক্ষমতায়, সেই সরকারই ঠিক করে। আমরা স্বার্থ ঠিক রেখেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো।”
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রয়োজন অনুসারে মিয়নামার উপযুক্ত সময়ে এই সংস্থাকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করবে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য গত বৃহস্পতিবার নেপিউ-তে এক সমঝোতা দলিলে সই করে। দলিল অনুযায়ী, আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, দুইমাসের মধ্যে শুরুর কথা বলা হলেও, শেষ কবে হবে তা বলা সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মাঠ-পর্যায়ে আরেকটি চুক্তি সই হবে এবং যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এই চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবে।”ৎ

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ২৫, ২০১৭ ৫:৫৭ অপরাহ্ণ