নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিক্ষার কোন বয়স নেই, সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি সমাপনী পরীক্ষায় নানী-নাতী এক সাথে অংশগ্রহণ করে এ কথায় প্রমাণ করলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগম।
এ বছর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দরী বেগমও অংশগ্রহণ করেছেন। দারিদ্রতার কষাঘাতে যার জীবন দুর্বিসহ। হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা গ্রামের বর্ঘাচাষি কৃষক আবুল হোসেনের স্ত্রী সুন্দরী বেগম। ওই দম্পত্যির চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে একজন সৌদি প্রবাসী, দুজন ভ্যানচালক ও শুধুমাত্র ছোট ছেলে সাইদুল ইসলামকে কষ্ট করে এইচএসসি পাশ করিয়েছেন। ৬ বছর আগে সুন্দরী বেগমের ছেলেদের উপার্জনের টাকা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাশিগঞ্জ শাখায় একাউন্ট খুলতে যান। নিরক্ষর সুন্দরী বেগম কোন রকম স্বাক্ষর শিখেছিলেন। তিনটি স্বাক্ষরের মধ্যে একটি স্বাক্ষর ভুল হওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ফাইলটি সুন্দরী বেগমের মুখে ছুঁড়ে মারেন। কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরে তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যে কোন মূল্যে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে তিনি বেড়িয়ে আসবেন। পরের দিন মেয়ের ঘরের নাতী জিহাদকে নিয়ে সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ভর্তি হন ১ম শ্রেণিতে। ৬ বছর পরিশ্রমের পর এ বছর তিনি নাতী জায়েদের সাথে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন।
গত সোমবার বাংলা পরীক্ষা চলাকালে দুপুর ১২ টার দিকে চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের ৩৭০ জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগমকেও মনযোগ সহকারে লেখায় ব্যস্ত রয়েছেন। পরীক্ষা শেষে সুন্দরী বেগম প্রতিবেদককে জানান, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের দুর্ব্যবহারে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিজ্ঞা করে তিনি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। আমার এবং আমার শশুরের পরিবার অতিদরিদ্র হওয়ায় ইচ্ছে সত্ত্বেও নিজেও পড়াশুনা করতে পারিনি, সন্তানদেরকেও পড়াশুনা করাতে পারিনি। তিনি বলেন, গত ৬ বছরে সকল ক্লাস পরীক্ষায় নাতীর বয়সী সকল শিক্ষার্থী-শিক্ষকের উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছেন। সমাপনী পরিক্ষায় অংশ নিয়ে খুব ভাল লাগছে।
সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম জানান,এই বয়সে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে সুন্দরী বেগম নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বেড়িয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার কোন বয়স নেই, এটাই প্রমাণ করলেন সুন্দরী বেগম। তাকে আমি স্যালুট জানাই। অজ্ঞতা থেকে ফিরে আসুক সবাই। চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব বদর উদ্দিন জানান, আমার ১৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এমন বিরল দৃষ্টান্ত আর দেখি নাই। এাট একটি অনুকরনীয় বিষয়।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ