২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:০৬

মুহাম্মাদ সা:কে কটূক্তির প্রতিবাদে মুসলিদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ নিহত-১

 গোলাম আযম সরকার (রংপুর) প্রতিনিধি:

রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের শলেয়াশা এলাকায় মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:কে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির প্রতিবাদে মুসলিদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছে। পুলিশের গুলিতে হাবিব মিয়া (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত আরো ৮০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘনাটিকে কেন্দ্র করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় সুযোগ বুঝে হিন্দুরাই তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে। দবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দাবি করছেন বিক্ষুদ্ধ লোকজন বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছেন।
এসময় প্রায় তিন ঘণ্টা রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি মামলা করা হয়েছে এবং সেই মামলার আলোকে চলছে গণহারে গ্রেফতার।
জানা গেছে, রংপুর সদরের পাগলাপীর শলেয়াশা এলাকায় কয়েকদিন আগে টিটু রায় নামে এক যুবক তার ফেসবুক আইডিতে হজরত মুহম্মাদ সা: সম্পর্কে অবমাননাকর পোস্ট দেন। এতে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা ওই যুবকের শাস্তির দাবিতে  শলেয়াশা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন।
শত শত মানুষ স্বতঃর্স্ফূর্তভাবে শলেয়াশা বাজার এলাকায় জমায়েত হয় এবং মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় ওই সড়কের দুই ধারে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে অবরোধকারীদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানায়।
এ নিয়ে পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের কথাকাটাকাটি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৫০ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপে ৮০ জন আহত হন।
তাদের মধ্যে হাবিব মিয়া, মাহবুল মিয়া, আলীম মিয়া, নাজির হোসেন, আলিম, জামিল, রফিকুল, নাসিরকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিব মিয়া নামে একজন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মেডিক্যাল ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই গোলাম কিবরিয়া।
আহতদের মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন এসআই সেলিম মিয়া, কনসটেবল নাসির হোসেন ও রফিকুল ইসলাম। শলেয়াশা বাজার বঝামপাড়া এলাকায় হিরেন বাবু, ধীরেন রায়, মন্টুসহ পাঁচটি বাড়িতে আগুন দেয় এবং ১০টি বাড়ি ভাঙচুর করে। হিরেন জানান, উচ্ছৃঙ্খল লোকজন এসে আমার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আগুনে আমার সব কিছু পুড়ে গেছে।
মুসলি আলিফ মিয়া ও রায়হান কবির জানান, আমরা নবীজী সম্পর্কে কটূক্তিকারীর শাস্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা দাবি করেন, কোনো হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়নি। বরং হিন্দুরাই তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে যার প্রমাণ অনেক পুলিশই জানে।
রংপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান সাইফ সাংবাদিকদের জানান, মহাসড়ক অবরোধ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানালে জনতা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ইটপাটকেলে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
এদিকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে রংপুরে ফেসবুকে কটূক্তি ও অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে সংঘর্ষ, অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওইদিন রাত ৮টায় রংপুর সার্কিট হাউস মিলনায়তনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর উপস্থিতিতে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) সাইফুর রহমান ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান। কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ ও তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান।
এ সময় বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহম্মেদ, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক বিপিএম, পিপিএম, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ১২, ২০১৭ ৫:৩৯ অপরাহ্ণ