১০ই এপ্রিল, ২০২৫ ইং | ২৭শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৫৭
ব্রেকিং নিউজ

নড়াইলে ৪ মাস ধরে বাড়িছাড়া ২০০ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পেড়লী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতায় নিহতের জের ধরে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামে আতঙ্কে চার মাস ধরে বাড়িছাড়া রয়েছে ২০০টি পরিবার।

জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ মে কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জারজিদ মোল্যা বিজয়ী হন। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন ইকবাল হেরে যাওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা শুরু হয়।

নির্বাচনের দুইদিন পর গত ২৫ মে সহিংসতা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক পেড়লী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান বাবুর বাড়িতে হামলা চালায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানের লোকজন।

এ সময় হামলা-পাল্টা হামলায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান জারজিদ মোল্যার সমর্থক কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পেড়লী গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন (৫০) নিহত হন। অপরদিকে হামলার সময় আহত পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক পেড়লী গ্রামের বদরুল ইসলাম (৫১) (ওয়ার্ড আ’লীগের সহ-সভাপতি) গত ২৭ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বদরুল মোফাজ্জেল গ্রুপের প্রতিপক্ষের লোক ছিলেন। দুটি হত্যাকাণ্ডের পর পাল্টাপাল্টি দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। এলাকাবাসী জানায়, মোফাজ্জেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও বদরুল সমর্থকরা মোফাজ্জেল সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেনি।

এদিকে মোফাজ্জেল হত্যাকাণ্ডের পর পেড়লী গ্রামে প্রতিপক্ষের অন্তত ৭০টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাকা দালানঘর ও টিনের ঘরগুলো ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও বিধ্বস্ত ঘর এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

এছাড়া দেড় হাজার মণ ধানসহ বিভিন্ন ফসল, ২০০টি গরু লুটপাট এবং শিক্ষার্থীদের বইখাতাসহ শিক্ষা উপকরণ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পদ খোয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পেড়লী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম বাবুসহ ক্ষতিগ্রস্তরা।

ঘটনার প্রায় চার মাস পর পেড়লী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও আসবাবপত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। এতোদিনেও স্বাভাবিক হতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ফিরতে পারছেন না বাড়িতেও। বিশেষ করে, পুরুষরা বাড়িছাড়া।

পেড়লী গ্রামের কিবরিয়া মোল্যার স্ত্রী হেলেনা বেগম বলেন, বাড়িঘর ভেঙে-চুরে ও কেটে ফেলেছে প্রতিপক্ষরা। প্রতিপক্ষের ভয় ও আতঙ্কে একদণ্ড কেউ বাড়িতে দাঁড়াতে পারে না। আমরা চার মাস ধরে বাড়িছাড়া। সাংবাদিকদের আসার বিষয়টি জানতে পেরে বাড়িতে এসেছি। আপনারা (সাংবাদিক) চলে গেলে আবার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে।

একই এলাকার জেসমিন খানম বলেন, আমার এক ছেলে কলেজে (এইচএসসি) এবং আরেক ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু, প্রতিপক্ষের হামলা-মামলার ভয়ে চার মাস ধরে স্কুল, কলেজে যেতে পারছে না আমার দুই ছেলে। পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে তাদের। রেজাউল মোল্যার স্ত্রী হেমেলা জানান, প্রতিপক্ষের ভয়ে তার স্বামী ও ছেলে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া তাদের পরিবারের ধানসহ সব লুট করে নিয়ে গেছে মোফাজ্জেল সমর্থকরা।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থ-জমিজমা থাকা সত্ত্বেও লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ায় আমি এখন পরের বাড়িতে থাকি ও খাই। মধ্যপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সাফায়েত জানায়, বাড়িতে কেউ থাকতে পারছে না। প্রতিপক্ষের ভয়ে তার বাবা বাড়িতে থাকতে না পারায় ঈদ আনন্দ হয়নি তাদের। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, মোফাজ্জেল হত্যা মামলায় ৩২ জনকে আসামি করা হলেও প্রতিপক্ষের ভয়ে তাদের ২০০ লোক বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

পেড়লী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জারজিদ মোল্যা দাবি করেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পেড়লী গ্রামে দুইপক্ষের সংঘর্ষে মোফাজ্জেল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নের কোথাও কোনো বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।

পেড়লী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এটিএম তসরিফুজ্জামান দাবি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর যেসব বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছিল, সেই অবস্থায় রয়েছে। নতুন করে কোনো বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়নি। এছাড়া আসামিরা জামিনে এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন এবং এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি তার।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭ ১২:২১ অপরাহ্ণ