ভোলা প্রতিনিধি :
ভোলা জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে অন্যের জমি জবর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে উভয় পক্ষই ওই জমি নিজেদের বলে দাবী করছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ধনিয়া মৌজার তুলাতুলি বাজারস্থ ২নং ওয়ার্ডের আব্দুল মন্নান হাওলাদারের ১৪২৮ নং খতিয়ানের জেএল নং-৫১, ডিপি নং-২১৪৮, রাজস্ব দাগ নং-১৩৬৫, বর্তমান হাল দাগ নং-১৮২৩ এর ভোগ দখলীয় ১ শতাংশ জমি জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইলিয়াস মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বাবলু’র নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী ও স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে জোড় পূর্বক জবর দখল করেন। আব্দুর রহমান বাবলু ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন কবিরের সালিশ-মিমাংশা মানছেন না। তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়েই ওই জমি জবর দখল করেন।
জমির মালিক দাবীদার মসুরা খাতুন ও আব্দুল মন্নান হাওলাদার এক অভিযোগে জানান, তাদের ভোগ দখলীয় ১ শতাংশ জমি আব্দুর রহমান বাবলু ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে জোড় পূর্বক দখল করে নেয়। ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বাবলু তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ওই ১ শতাংশ জমি দখল করতে আসে। ওই জমির উপর দিয়ে বাড়ীতে আসা-যাওয়ার পথটি তারা বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দেয়। এসময় তারা বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করেন বাবলু।
তারা আরো অভিযোগে বলেন, আব্দুর রহমান বাবলু গংরা জয়নাল আবেদিন তালুকদারের কাছ থেকে অন্য দাগে জমি ক্রয় করেছেন। সেখানে তারা তাদের ক্রয় কৃত জমি ভোগ দখল করতে না পেরে একই খতিয়ানের আমাদের ক্রয়কৃত জমিতে এসে জবর দখল করেন। আমরা এই জমি দীর্ঘদিন যাবত ভোগ দখল করে আসছি। হঠাৎ করে আব্দুর রহমান বাবলু আমাদের ভোগ দখলীয় জমি দখল করেন। ঘটনার দিন আব্দুর রহমান বাবলু আমাদেরকে রাজনৈতিক ভাবে ভয় দেখানের জন্য জেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও সম্পাদকসহ অনেক আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে ঘটনাস্থলে আনেন।
স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আব্দুল মন্নান হাওলাদার ও আব্দুর রহমান বাবলু গ্রুপের মধ্যে ১ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বাবলু তার লোকজন নিয়ে বিরোধীয় জমির মধ্যে দিয়ে মন্নান হাওলাদারের বাড়ীতে আসা-যাওয়ার যে রাস্তা ছিল তা বন্ধ করে দিয়ে দখল করে নেয়। জমির বিরোধ নিস্পত্তিতে ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন কবিরসহ স্থানীয় গন্য-মান্য ব্যক্তিসহ একাধিকবার শালিস-মিমাংশার চেষ্টা করেন। কিন্তু আব্দুল মন্নান গ্রুপ মানলেও বাবলু গ্রুপ ওই শালিস মানছেন না। তিনি শালিস থেকে উঠে যান। দু’পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছেন। তাই বিরোধীয় জমি নিয়ে কোন সুষ্ঠু সমাধান হয়নি।
বিরোধীয় জমিতে একটি দোকান রয়েছে। বর্তমানে ওই দোকনটি করছেন আবু সাঈদ নামের এক ব্যক্তি। বিরোধীয় জায়গা সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আগে এই জমিতে অন্য একজন দোকান দিয়ে ব্যবসা করেছে। আমি তাদের কাছ থেকে দোকান ক্রয় করে ৮/১০ বছর যাবত ব্যবসা করে আসছি। আমার কাছ থেকে বাবলু গ্রুপরাই ভাড়ার টাকা নিচ্ছে। কে জমির সঠিক মালিক তা বলতে পারছি না। তবে এই জমি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ রয়েছে উভয় গ্রুপের মধ্যে তা তিনি স্বীকার করেছেন।
নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য (জমি দখল) সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসার ব্যাপারে ইলিয়াস মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বিপ্লব এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিজ স্বার্থ হাসিলে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা কোন আইনে নেই। তবে স্কুলের ৮/১০ শিক্ষার্থী দিয়ে আব্দুর রহমান বাবলু ওই কাজ করিয়েছেন এমন সংবাদ আমি পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে দেখব কোন কোন শিক্ষার্থী সেখানে গিয়েছিলো। যারা গিয়েছিলো তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর শিক্ষক আব্দুর রহমান বাবলু স্যার প্ররোচনার মাধ্যমে যদি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে থাকেন, তা প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্কুলের সভাপতি জাহাঙ্গীর মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিজের কাজে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার কোন বিধান নেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে জানিয়েছেন। তদন্ত স্বাপেক্ষে যদি তা প্রমানিত হয় তাহলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্কুল শিক্ষক আব্দুর রহমান বাবলুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের ক্রয়কৃত ওই ১ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন যাবত ভোগ দখল করে আসছি। আমাদের জমির উপর দিয়ে একটি পথ ছিল তা বৃহস্পতিবার বন্ধ করতে গেলে আব্দুল মন্নান গংরা তাতে বাঁধা দিতে আসে। এ সময় তাদের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়েছে। তবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
নিজের কাজে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা এবং ঘটনাস্থলে জেলা কৃষকলীগের নেতৃবৃন্দদের এনে প্রতিপক্ষকে ভয়-ভীতি দেখানো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটি হয়েছে। ওই সময় ঘটনাস্থলে ৮/১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। আমি তাদেরকে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য আনিনি।
তিনি আরো বলেন, বিরোধীয় জমি নিয়ে একাধিকবার শালিস-মিমাংশা চেষ্টা করা হয়েছে। কোন ফল পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যান মহোদয় একজন মেম্বারকে মিমাংশা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। ওই শালিস-মিমাংশায় আমিন থাকবে। সেখানে বিরোধীয় জমির কাগজ পর্যালোচনা করা হবে। যার কাগজ সঠিক হবে, তিনিই ওই জমি পাবেন। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর