২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:১১

ঈদ আনন্দ নেই চরফ্যাশন উপজেলার বাইশ হাজার জেলে পরিবারে

এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা :

ইলিশের ভরা মৌসূম গত কয়েক দিন ধরে সাগরে জেলেদের জালে ইলিশের দেখা মিললেও ভোলার দক্ষিণে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা নেই। কারণ হিসেবে ডুবচর ও ইলিশের প্রজনন সময়কে দায়ী করেছেন জেলে ও ইলিশ বিশেষজ্ঞরা। কয়েক বছর আগেও এ সময়ে মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় জেলেদের জালে ঝাঁকে-ঝাঁকে রূপালী ইলিশ দেখা যেতো। ভরা মৌসূমে ইলিশ না পেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে উপকূলের জেলেরা। ফলে তাদের ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
ছালাউদ্দিন মাঝি জানান, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে কার্তিকের শেষ পর্যন্ত ইলিশ ধরার মৌসূম। এরমধ্যে আষাঢ়-শ্রাবণ ইলিশের ভরা মৌসূম। সে অনুযায়ী এখন জালে ঝাঁেক-ঝাঁকে ইলিশ পড়ার কথা, কিন্তু তা পড়ছে না।
চরফ্যাশন উপজেলার বাইশ হাজার জেলের জীবিকা নির্বাহ হয় মাছ ধরে। জীবন জীবিকা সংসার, সন্তানদের লেখাপড়া সবই তাদের উপর নির্ভরশীল। নদীতে মাছ না থাকায় তাদের বেকারত্ব জীবন-যাপনের ফলে এনজিওর ঋণ ও মহাজনদের দাদনের টাকার চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
ছালাউদ্দিনের মতো অনেক জেলে মেঘনায় ইলিশ না পেয়ে বেকার বসে আছেন। জেলেরা জানান, ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে গেলে তাদের জ্বালানি তেল ও খাবার খরচই উঠে না। এ জন্য মাছ ধরতে না গিয়ে বসে আছেন।
বকসী ঘাটের ফারুক মাঝি (৩২) বলেন, মৌসূমের শুরুতে অনেক আশা নিয়ে তিনি জাল নিয়ে নদীতে যান। মাছ না পেয়ে শেষে তাঁকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। বারবার একই ঘটনা ঘটায় এখন ইলিশ ধরতে যাওয়ার উৎসাহও কমে গেছে। জ্বালানি তেলসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়াও তাঁদের মাছ ধরতে না যাওয়ার একটি বড় কারণ বলে তিনি জানান।
সামরাজ ঘাটের জেলে সিরাজ মাঝি (৪৫), নাছির মাঝি (৩৫), নুরুল ইসলাম মাঝিসহ (৪৯) অনেক জেলে বলেন, ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গেলে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম দিকে প্রতিবারে দুই-এক হালি করে ইলিশ পাওয়া গেলেও এখন মাছ পাওয়াই দায়। এতে খরচ উঠে না। তাই তাঁরা উৎসাহ পাচ্ছেন না।
ভরা মৌসূমেও মাছ না পড়ার কারণ হিসেবে সদর উপজেলার জেলে সমবায় সমিতির সহ সভাপতি নান্নু জানান, ইলিশের উৎস হিসেবে পরিচিত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেল। ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ পড়ত সেখানে। এখন সেখানে হরদম ট্রলার চলাচল করায় ইঞ্জিনের বিকট শব্দে ইলিশ আসে না। ওই চ্যানেলে একজন জেলে এখন দিনে দু-একটি ইলিশও পায়না।
এছাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার বলেন, ইলিশ মাছ চলাচলে যে পরিমান ¯্রােত প্রয়োজন, তা এখন আর নেই। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া এবং ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়া এখনও শুরু না হওয়ার কারণে গভীর সমুদ্রে ইলিশের অবাধ বিচরন রয়েছে। আগামী পূর্ণিমায় ইলিশ নদীতে বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তখন জেলেদের হতাশা, বেকারত্ব, দাদন, ও জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

দৈনিক দেশজনতা /এন আর

 

প্রকাশ :আগস্ট ২৯, ২০১৭ ৯:৩১ অপরাহ্ণ