স্বাস্থ্য ডেস্ক:
রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রায়ই রক্ত, মলমূত্রসহ অনেক পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে৷ কিন্তু শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস, অর্থাৎ মুখের বাতাস বিশ্লেষণ করে রোগ শনাক্ত করতে পারলে কেমন হয়? এই প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷
মুখের বাতাস থেকে রোগ নির্ণয় করতে চান সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের দুই গবেষক৷ পরীক্ষামূলকভাবে তাঁরা কয়েক’শ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাসে কোন রোগের কোন অণু রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন৷ এই পরীক্ষা সফল হলে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সেটা হবে এক বিপ্লবের শামিল৷ ফুসফুস বিশেষজ্ঞ মালকল্ম কোলার বলেন, ‘‘ভেবে দেখুন, আপনি রোগী হিসেবে হাসপাতালে এলেন৷ যন্ত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ছেড়ে দেবার কয়েক মিনিটের মধ্যে আমি আপনার জানালাম, আপনার অমুক রোগ হয়েছে৷ রক্ত বা মূত্র পরীক্ষা ছাড়াই এটা করা যাবে৷ আমাদের খুব সুবিধা হয় এবং রোগীদের জন্য তা অনেক কম কষ্টকর হয়৷”
অলটেন জেলার হাসপাতালে এমন যন্ত্রের প্রাথমিক প্রয়োগ শুরু হয়েছে৷ তবে এই পদ্ধতিতে চূড়ান্ত রোগ নির্ণয় করতে আরও অনেক সময় লাগবে৷ আপাতত এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে৷ ফুসফুস বিশেষজ্ঞ মার্ক মাউরার বলেন, এই সেই যন্ত্র যার প্রয়োগ আমরা আগে দেখেছি৷ এটির সাহায্যে আমরা ব্রংকাইটিসে সংক্রমণের মাত্রা পরিমাপ করতে পারি৷ সেই ফলাফল দেখে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি, যে এবার কোন দিকে আরও অনুসন্ধান চালানো উচিত৷ সমস্যা হলো, সহজে রোগ নির্ণয় করা যায় না৷ আরও পরীক্ষা চালিয়ে সমস্যার উৎস বোঝার চেষ্টা করতে হয়৷
জুরিখ শহরের গবেষকরা এই প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে চান৷ তবে তাঁরা সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছেন বলে আশা করছেন৷ তাঁদের হাই-ডেফিনেশন মাস স্পেকট্রোমিটার অতি সূক্ষ্মভাবে মুখের বাতাসের মধ্যে সব পদার্থ চিহ্নিত করতে পারে৷ এভাবে চিকিৎসার কাজে হাইটেক প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ রসায়নবিদ রেনাটো সেনোবি বলেন, ‘যন্ত্র অণুর ওজন মাপে৷ বিশেষ করে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে অণু বেরিয়ে আসে, সে ক্ষেত্রে এই পরিমাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তার ওজন মাপতে পারি৷ এমনকি সেই বাতাসে কয়েক’শ থেকে কয়েক হাজার পদার্থ শনাক্ত করতে পারি৷
এই পদার্থগুলির সম্মিলিত প্যাটার্ন বা নকশা অনেক রোগের লক্ষণ হতে পারে৷ গবেষকরা এমন একটি রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন৷ স্লিপ-অ্যাপনোয়েয়া সিন্ড্রোম নামের এই রোগ এতকাল শুধু ব্যয়বহুল স্লিপ ল্যাবে শনাক্ত করা সম্ভব হতো৷ মালকল্ম কোলার বলেন, একটি পত্রিকায় আমাদের কাজের দৃষ্টান্ত প্রকাশিত হয়েছে৷ স্লিপ-অ্যাপনোয়েয়া সিন্ড্রোমের এক রোগীর চিকিৎসার আগে ও পরে আমরা পরীক্ষা চালিয়েছিলাম৷ দেখতে পাচ্ছেন, এক্ষেত্রে পেন্টেনালের অণুর ঘনত্ব কীভাবে মুখের বাতাসে বেড়ে যাচ্ছে৷ চিকিৎসা থামিয়ে দিলে কী হয়, তার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷
মাস স্পেকট্রোমিটার দিয়ে গবেষকরা অন্যান্য রোগও চিহ্নিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো, মুখের বাতাস থেকে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত করা৷ মালকল্ম কোলার বলেন, সবাই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত করতে চায়৷ সেই লক্ষ্য নিয়ে প্রচেষ্টা শুরু করলে আমরা সম্ভবত ব্যর্থ হতাম৷ আমরা আরও সহজ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছি, যা দিয়ে আমাদের ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ গবেষণা ছোট ছোট ধাপে এগোয়৷ তবে অবশ্যই একটা স্বপ্ন থাকতে হবে৷ আমাদের লক্ষ্য হলো মুখের বাতাসে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত করা৷
ফুসফুসের সাধারণ রোগগুলি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে অবশ্য ভালো ফল পাওয়া গেছে৷ এর মাধ্যমে গবেষকরা মুখের বাতাস বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে সাফল্যের নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিতে চান৷
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ