আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
থাইল্যান্ডে মানবপাচার চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর এক জেনারেলসহ ৬২ জন দণ্ডিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন রাজনীতিক ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। দুই বছর আগে মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে জঙ্গলে পাচারকারীদের পরিত্যক্ত শিবিরে গণকবরের সন্ধান মেলার পর বিশ্বজুড়ে আলোচনা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১০৩ আসামির বিরুদ্ধে বুধবার রায় ঘোষণা করে ব্যাংককের একটি আদালত। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মানাস কংপেনের বিরুদ্ধে মানবপাচার সংক্রান্ত আরও কয়েকটি অভিযোগের পাশাপাশি ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আসামিদের কেউ কেউ সংগঠিত আন্তঃদেশীয় অপরাধ, জোর করে আটকে রেখে মৃত্যু সংঘটন ও ধর্ষণের দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন। ব্যাংকক পোস্ট বলছে, মানবপাচারে বিচারের মুখোমুখি হওয়াদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদধারী কর্মকর্তা মানাস থাইল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ওই এলাকা পরিণত হয়েছিল মানবপাচারের কেন্দ্রে, পাচারকারীদের এই নেটওয়ার্ক মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। জেনারেল মানাস পাচারকারীদের থেকে তিন কোটি ৫৬ লাখের (১৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন বাথ) বেশি টাকা নিয়েছিলেন বলে আদালতে উঠে আসে। বিনিময়ে তিনি পাচারকারীদের নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি এড়িয়ে সাগরের পাড় ধরে জঙ্গলের মধ্যে ওই সব শিবিরে যাওয়ার পথ বাতলে দিতেন। ২০১৩ সালে তাকে পদোন্নতি দিয়ে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কমান্ডের নেতৃত্বে আনা হয়েছিল। বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ও-চা সে সময় দেশটির সেনাপ্রধান ছিলেন। ২০১৫ সালের মে মাসে দক্ষিণাঞ্চলীয় সংখলা প্রদেশে পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে পরিত্যক্ত শিবিরে ৩৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের পর মানবপাচারের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালায় থাই সরকার। সে সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এই আসামিদের। মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ওই শিবিরে আটকে তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হত বলে তদন্তে উঠে আসে। দণ্ডিতদের মধ্যে অন্তত একজন, পাজুবান অংকাচোতেপান, আধুনিককালের এই ‘দাস ব্যবসার’ অন্যতম হোতা বলে ব্যাংককপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়। ‘বিগ ব্রাদার টং’ নামে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলীয় সাতুন প্রদেশের এই রাজনীতিক এক সময় প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। তাকে ৭৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ৭৮ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত আরেক রাজনীতিক বান্নাকং পংফল সংখলা প্রদশের পেদাং বেসারের সাবেক মেয়র। প্রতিবছর মানব পাচারকারীদের হাতে পড়ে হাজার হাজার মানুষ (বিশেষ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ও বাংলাদেশিরা) অবৈধ পথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে। সর্বোচ্চ ৯৪ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে আনওয়ার নামে পরিচিত সোয়ে নেইং নামে একজন রোহিঙ্গার। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখলার পাহাড়ি জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের যেসব শিবিরের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল, তার একটি পরিচালনাকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন আনওয়ার। মানব পাচারের আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়া থাইল্যান্ডকে মানুষ কেনা-বেচা, মানবপাচার ও দাস ব্যবসা বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

