রাঙামাটি প্রতিবেদক:
১৩ জুনের পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিয়ে এখনও নির্বিকার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ওইদিন ভূমি ধসে সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে এসব বিদ্যালয় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান ও শ্রেণী কার্যক্রম। যে কোনো মুহূর্তে ফের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এসব আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড় ধসের পর গত একমাসেও জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার তো দূরের কথা- এ পর্যন্ত জেলা পরিষদের কেউ কোনো বিদ্যালয় দেখতেও যাননি। নেননি কোনো খোঁজ। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা নিরূপণের নির্দেশও দেয়া হয়নি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ হতে।
জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী জেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করে সরকার। কিন্তু রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা কেবল শিক্ষক নিয়োগ ও বদলি নিয়ে প্রভাব কাটান। এ নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বাণিজ্য।
অভিযোগ ওঠে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যরা নিয়োগ-বদলির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ওপর। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোর কী অবস্থা, কীভাবে চলছে সেইসব বিষয়ে আর কোনো খোঁজ নেন না। ১৩ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোনো খোঁজ-খবরও নেয়া হয়নি পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের পক্ষে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা নিরূপণের কাজ চলছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা বলেন, ১৩ জুনের পাহাড় ধসের ঘটনায় সদরসহ জেলায় বহু প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয় বর্তমানে চরম ঝুঁকির মধ্যে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আজও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা নিরূপণেও নির্দেশনা দেয়া হয়নি। নিজের উদ্যোগে তার উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা নিরূপণ করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, পাহাড় ধসের ঘটনায় শহরসহ সদর উপজেলায় ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ৭টি। এসব ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ে পাঠদান ও শ্রেণী কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ঝুঁকির মধ্যে চলছে পাঠদান ও শ্রেণী কার্যক্রম। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হল- রাঙামাটি সদরের কুতুছড়ি ইউনিয়নের উত্তর কুতুকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মগবান ইউনিয়নের বড়াদম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালুখালী ইউনিয়নের হেমন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙামাটি পৌরসভার পুলিশ লাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভেদভেদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাপছড়ি ইউনিয়নের বামে তৈমিদুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হল- সাপছড়ি ইউনিয়নের যৌথখামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দীঘলীবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালুখালী ইউনিয়নের বাদলছড়িমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের মাচ্ছ্যাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মগবান ইউনিয়নের ধনপাতামুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেরেটকাটা অমরস্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেচারাম কারবারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাল মোহন কারবারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাপছড়ি ইউনিয়নের নারাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেপ্পোছড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জীবতলী ইউনিয়নের জীবতলী হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙামাটি পৌরসভার পুলিন বিহারী দেওয়ানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ত্রিদিবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বর্ণটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিলাইছড়ি উপজেলায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে থাকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা জানান, ওই উপজেলায় ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব বিদ্যালয়ে পাঠদান ও শ্রেণী কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরও বহু প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের দ্রুত সংস্কার ও মেরামত দরকার।
যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও শিক্ষাবিষয়ক কমিটির আহবায়ক অংস্ইু প্রু চৌধুরী বলেন, জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর তালিকা নিরূপণের কাজ চলছে। জুন ফাইনাল শেষ হয়েছে মাত্র। তাই কাজ গুছিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে। তালিকা নিরূপণ চুড়ান্ত হলেই ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে।
শিক্ষক নিয়োগ ও বদলি নিয়ে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, এসব অভিযোগ অবান্তর। ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতেই অনেকে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করতে পারে। কেউ কারও বিরুদ্ধে সঠিক তথ্যপ্রমাণাদিসহ নির্দিষ্ট অভিযোগ দিতে পারলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রওশন আলী বলেন, জেলায় ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গত ১৩ জুন পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়গুলো জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের
তদারকিতে নিজ নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিয়ে নিরুপন করা হয়েছে। এব্যাপারে উর্ধ্বতন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা পরিষদকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদ এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। অথচ জেলা পরিষদ প্রাথমিক নিয়োগ ও বদলীর ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর