২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:২১

আমন আবাদে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘বোরোতে সাড়ে তিন বিঘা জমির ধান শ্যাষ হয়া গেইছে, ত্রিশ হাজার টাকা নাই, ব্লাস্ট রোগ হামাক খেয়া ফেলাইলো’ কষ্ট করি হইলেও আমন লাগাইছি। আশা করছি লাভ হইবে।’ এমন কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়াল খাতা গ্রামের কইল্লাবেঁচা টারির কৃষক আব্দুর রউফ। বোরোতে লোকসানের ক্ষোভ ও কষ্ট থাকলেও আমন মৌসুমে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে লাগাচ্ছেন রোপা।

আরেক কৃষক জলঢাকা শহরের দুন্দিবাড়ি মাস্টার পাড়া মহল্লার বাহার উদ্দিন আক্ষেপ করে বললেন, ‘হামরা কৃষক মানুষ। আবাদ করি খাবার নাগে। কি করিবেন আর। বোরোতে সব গেলো। কপালোত যা ছিলো, হইছে। তারজন্য কি আর আবাদ থামি থাকিবে।’

তিনিও সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে লাগাচ্ছেন আমন চারা। এজন্য জমিতে তিনিসহ (বাহার) ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আরো আটজন শ্রমিক।

বর্ষার ভরা মৌসুমে জেলার চারদিকে চলছে আমন আবাদের ধুম। পানিতে টইটুম্বুর জমিতে উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে আমন চারা রোপণের কাজ। দেখা মিলছে দল বেঁধে চারা লাগানোর চিত্রও।

শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আট জনে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়েছি। চারা রোপণের পর সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পাবো। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। জমিতে আটকা রয়েছে যথেষ্ট পানি। যার ফলে চারা লাগাতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছি আমরা।’

সেখানকার আরেক কৃষক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমন মৌসুমে ধানের ভালো বাজার পাওয়া যাবে। লোকসান হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমনে বিঘা প্রতি প্রায় ২ হাজার ২০০টাকা খরচ হবে। আর বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হবে অন্তত ১৬ মণ। বিক্রি করে বিঘা প্রতি দশ হাজার টাকার মত লাভ হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমনে সেচ(পানি) লাগে না, সার ও কীটনাশক খরচও কম।’

জেলা সদরের ইটাখোলা, টুপামারী, রামনগর, লক্ষ্মীচাপ, কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী, নিতাই, জলঢাকা উপজেলার খুটামারা, কাঁঠালি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে কৃষকদের ব্যস্ততার চিত্র। কেউবা জমি তৈরি, কেউবা বীজতলা থেকে বীজ তোলা, কেউবা জমি চাষ আর কেউবা ব্যস্ত রোপণে।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বর্ষার ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনেকটা আগে ভাগেই আমন আবাদে নেমে পড়েছেন কৃষকরা। আগাম করায় ক্ষতি থেকে রক্ষা, উৎপাদন এবং দাম ভালো পাবেন বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আবেদীন হিরু জানান, কৃষকদের সারিবদ্ধ ভাবে চারা রোপণ, সেচ, পরিমিত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া পোকা মাকড়ের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে লাইভ ও ডেড পার্চিং করারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা উৎসব মুখর পরিবেশে মাঠে আমন আবাদে সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান রাকিব আবেদীন।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমের জন্য ৬ হাজার ৩৯৮ হেক্টরে বীজতলা করেছেন কৃষকরা। আর ১লাখ ১২ হাজার ৩৪৮ হেক্টরে আবাদ করবেন আমন। গতবার ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করেছিলেন তারা।

গত বারের চেয়ে চলতি মৌসুমে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, গেল বছর ৩ লাখ ২০ হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জুলাই ১০, ২০১৭ ৩:২৫ অপরাহ্ণ