২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৪১

কিছু মহল পাহাড়ি-বাঙালি বিভেদ তৈরি করে পার্বত্য সমস্যা জিইয়ে রাখতে চাইছে: নাজমুল হুদা

শাহ আলম, রাঙামাটি প্রতিনিধি:
কিছু মহল পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে বিভেদ তৈরি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা জিইয়ে রাখতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। লংগদুতে পাহাড়িদের গ্রামে অগ্নিসংযোগ এবং রাঙামাটি সদরে পাহাড় ধসের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা শনিবার লংগদুর ২ জুনের পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগ এবং রোববার সকালে ১৩ জুনের পাহাড় ধসে রাঙামাটি সদরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে দুপুরে শহরের বনরূপার ক্যাফেলিংক রেস্টুরেন্টে সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেন। স্থানীয় সংগঠন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সহায়তায় অনুষ্ঠিত এ সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান সাজু ও আক্তার সেলিম খানসহ অন্য সফর সঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।
নাজমুল হুদা বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশী। স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ আমাদের ভূ-খন্ড। তার একটি অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম। আমাদের এই ভূ-খন্ড রক্ষায় দেশের জাতি, উপজাতি, নৃ-গোষ্ঠী সবাই সমন্তিভাবে নিবেদিত বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু স্বার্থান্বেষী কিছু মহল পার্বত্য চট্টগ্রামকে মূল ভূ-খন্ড থেকে আলাদা দেখতে চায়। মূলত তারাই পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে পার্বত্য সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে চাইছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি বাঙালি নয়, এখানকার সবাই পার্বত্যবাসী এবং সবার স্বার্থরক্ষা দরকার- এমন চিন্তা-চেতনা ও দায়িত্ববোধ থাকলে আর কোনো সমস্যা থাকার নয়। এ দৃষ্টিকোণ দিয়েই পার্বত্য সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এগোতে হবে। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে।
তিনি উল্লেখ করে আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। আমি দায়িত্বে থাকাকালে এ অঞ্চলের উন্নয়নকে গুরুত্ব সহকারে দেখতাম। লংগদুর ঘটনা প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা বলেন, নয়ন স্থানীয় যুবলীগ নেতা। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা ছিল জঘন্য অপরাধ। কিন্তু ওই হত্যাকে কেন্দ্র করে নিরীহ পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটিও কখনও মেনে নেয়া যায় না। তিনি লংগদু পরিদর্শনকালে নয়নের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করাসহ অগ্নিসংযোগের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন বলে উল্লেখ করেন।
১৩ জুন রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক উল্লেখ করে সরকারের কাছে এ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তসহ লংগদুর আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত পুনর্বাসনের দাবি জানান নাজমুল হুদা।
রাঙামাটি জেলার লংগদুতে বাংলাদেশ তৃণমুল বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ মানব অধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক যোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রী ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে আলাদা করতে একটি গোষ্ঠি কাজ করে যাচ্ছে। এই দেশ আমাদের সকলের। এই দেশে বাস করার সকলের অধিকার রয়েছে। এখানে কে বাঙালি কে পাহাড়ি সেটি ভাগ করার কিছু নাই। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বসবাসযোগ্য অবস্থান তৈরি করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সে জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিত কামনা করছি। তিনি আরো বলেন, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে হবে। সকলের মধ্যে মানবতা, ভ্রাতৃত্ববোধ থাকতে হবে। সম্প্রীতি রক্ষা করে সকলকে বসবাস করতে হবে। এটা গড়ে উঠলে নিজেদের মধ্যে আর হিংসা হানাহানি থাকবে না। একটি সুখী সমবৃদ্ধশালী জনপদ গড়ে তুলতে এর কোন বিকল্প নাই। গত শনিবার দুপুরে লংগদু রেষ্ট হাউজে ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ি লোকজনদের সাথে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা লংগদু অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সাথে কথা বলেন সেই সাথে যুবলীগ নেতা ও মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের পরিবারের সাথেও সাক্ষাত করেন। এই সময় নয়নের পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ তৃণমুল বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মো. আক্কাস আলী, বাংলাদেশ মানব অধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সদস্য এডভোকেট সেলিম হুদাসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পক্ষে কথা বলেন, কালাচান চাকমা বলেন, পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী সমাধন না হওয়া পর্যন্ত এভাবে সহিংসতা চলতেই থাকবে। লংগদু পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা বলেন, বর্ষার মৌসুমে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। এই অবস্থায় আপনারা সরকারের কাছে আমাদের কথাগুলো গিয়ে জানাবেন সেটাই আমাদের চাওয়া। তিনি আরো বলেন, আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেন নাই। যতদ্রুত সম্ভব নিরাপত্তা সহ আমাদের বাড়িঘরে বসবাসের উপযোগী করা হউক।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১ জুন) লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মোটর সাইলেক চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় পাওয়া যায়। ২ জুন সকালে প্রতিবাদ মিছিল থেকে স্থানীয় পাহাড়ীদের দোকান, বসত ঘরসহ চারটি গ্রামের দু’শতাধিক বাড়ীঘরে আগুন দেয়া হয়। স্থানীয় বাঙালিরা এই ঘটনার জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দায়ী করে।
এদিকে, শুক্রবার (৯ জুন) খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে তারা নয়ন হত্যাকান্ডে বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয় বলে জানায় পুলিশ। নয়নের মোটর সাইকেলটিও দীঘিনালার মাইনী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুই ব্যক্তি রমেল চাকমা ও জুনেল চাকমা পুলিশকে জানিয়েছে, মোটরসাইকেল ছিনতাই করার জন্যই তারা নয়নকে হত্যা করে।

দৈনিক দেশজনতা/এমএম

 

 

প্রকাশ :জুলাই ৯, ২০১৭ ৮:৫৪ অপরাহ্ণ