৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৩৫

রাঙামাটিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

 রাঙামাটি প্রতিনিধি:
রাঙামাটিতে ১৩ জুন পাহাড় ধস এবং ২ জুন লংগদুতে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ শিক্ষা উপকরণ বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নানেনর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ৫০০ ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণের জন্য প্রত্যেককে স্কুলড্রেস বাবদ নগদ ১০০০ টাকা, ১০ দিস্তা কাগজ, ১ ডজন কলম ও ১টি করে জ্যামিতি বক্স দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে কয়েক শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণের পর নগদ টাকাসহ এসব শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মাধ্যমে।
রাঙামাটি রাণী দয়াময়ী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, উপ-পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা, সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন, প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, রাঙামাটি পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ তাছাদ্দিক হোসেন কবির, রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম খীসা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নির্মল কুমার চাকমা। অনুষ্ঠানে শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, পাহাড় ধস এবং লংগদুর অগ্নিসংযোগ ঘটনায় স্কুল ড্রেস, পাঠ্যবই, খাতা, কলম, জ্যামিতি বক্সসহ সব শিক্ষা উপকরণ ধ্বংস হয়ে গেছে মাধ্যমিক স্তরের ৫০০ শিক্ষার্থীর। এদের মধ্যে লংগদুর অগ্নিসংযোগে বইপত্রসহ সব উপকরণ পুড়ে যায় ২১৯ শিক্ষার্থীর। বাকিদের পাহাড় ধসের ঘটনায় সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বাড়িঘর বিলীন হয়ে ধ্বংস হয় শিক্ষা উপকরণাদি। আর হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর নষ্ট হয়ে গেছে পাঠ্যবই।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, বোর্ডের গুডামে মজুত না থাকায় বিনামূল্যে বই এ মুহূর্তে সরবরাহ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঠানো তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় মজুত থাকা পাঠ্যবই সংগ্রহ করে যত দ্রুত সম্ভব রাঙামাটির চাহিদার বইগুলো সরবরাহ দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে আজ যে সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা অপ্রতুল। এটা শুধু আমরা যে তাদের পাশে রয়েছি, সেই সহানুভূতি প্রকাশের জন্যে। সহায়তার জন্য সামনে করণীয় যা যা দরকার তা করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির মোট ১৫০৫ শিক্ষার্থীর চাহিদায় চলতি ২০১৭ সালের বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহের জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সরবরাহ না পাওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে পারছি না। ফলে তাদের শিক্ষাগ্রহণ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। লংগদুর অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত মাধ্যমিকের ২১৯ শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই পুড়ে যাওয়ায় তারা কোনো ক্লাস করতে পারছে না। আমরা তাদের হাতেও বই তুলে দিতে পারিনি।
অনুষ্ঠানে রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল বলেন, পাহাড় ধসের দুর্যোগে মাধ্যমিক ছাড়াও অসংখ্য প্রাথমিক শিশু ক্ষতির শিকার হয়ে তাদের পড়ালেখায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। সদরসহ জেলার বহু প্রাথমিক বিদ্যালয় বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ঘটনার পর আজ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর কোনো খোঁজও নিচ্ছে না- এমন অভিযোগও তোলা হচ্ছে। এ জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে এমন আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তারা শুধু শিক্ষক নিয়োগ ও বদলির বাণিজ্য দিয়েই তাদের কর্তব্য শেষ করে যাচ্ছে। এছাড়াও আর স্কুলগুলোর হাল কী, কীভাবে চলছে সেসবের কোনো খোঁজ রাখেন না তারা। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক স্কুল ও শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রয়োজনে পদক্ষেপের জন্য জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের প্রতি আহবান জানান প্রেসক্লাব সভাপতি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, দুর্যোগে ক্ষতির পর আমরা সবক্ষেত্রে যাচাই করছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জেলা পরিষদ কী করছে না করছে তা দেখে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

প্রকাশ :জুলাই ৮, ২০১৭ ৯:২২ অপরাহ্ণ