১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:০২

যে মানুষটা আমাকে একজন মানুষ হতে সহায়তা করছে

ক’দিন পরেই ঈদ। এবারের ঈদেও বেশ কিছু নাটকে দেখা মিলবে মিথিলার। যদিও মধ্যিখানে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় কাজে ব্যাঘাত ঘটেছিল। তবে এখন সুস্থ। গত ১২ জুন থেকে ফের কর্মজীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মিথিলা। এছাড়া তাহসান-মিথিলার দাম্পত্য জীবন নিয়েও নানান গুঞ্জন চারিদিকে ডালপালা মেলেছে। আর এসব বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন। তা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল-

ঈদকে ঘিরে আপনার পরিকল্পনা কী?

মিথিলা: ঈদে সেরকম কোন পরিকল্পনা নেই। বিশ্রাম নেবো। এটাই শুধু পরিকল্পনা।

আসছে ঈদে কি ভিন্নতর কিছু করছেন?

মিথিলা: আমি এবারের ঈদে যে কাজগুলো করেছি। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছি। আমার অভিনীত মোট ৬টি নাটক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবে। এরমধ্যে তিনটি নাটক পরিচালনা করেছেন ইফতেখার আহমেদ ফাহমি। ফাহমির সঙ্গে ৫ থেকে ৬ বছর পর কাজ করেছি। ফাহমিও মাঝখানের সময়টায় কম কাজ করেছে। ওর কাজগুলো এমনিতেই ভিন্ন ধাঁচের হয়। আমার মনে হয় ওর নাটকগুলোতে আমাকে দর্শক ভিন্নভাবেই দেখবে। মিজানুর রহমান আরিয়ানের পরিচালনায় দুটি নাটকে অভিনয় করেছি। ওর গল্প তো প্রেমের গল্প, সেরকম দুটি গল্পে কাজ করেছি। আর মাবরুর রশিদ বান্নাহ’র পরিচালনায় একটি নাটকে অভিনয় করেছি। ওর নাটকে চরিত্রগুলো একটু বোল্ড কিংবা চটপটে থাকে। এ নাটকটিও তেমনই। সবকিছুর একটা কম্বিনেশন থাকবে বলে আশাকরি।

বর্তমানে টেলিভিশনের কোনো ট্রেন্ড নিয়ে আপনি চিন্তিত?

মিথিলা: যেটা সবার অভিযোগ, প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখানো হয় নাটক দেখানোর সময়। অনেকগুলো চ্যানেল। তাদের কাছেও কাজের মান ধরে রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হয় প্রত্যেক চ্যানেল মালিককে বিষয়টি চিন্তা করে দেখা উচিত। আর বিজ্ঞাপনের কারণে আমরা দিন দিন নাটকের দর্শক হারাচ্ছি। আর খুব কম চ্যানেলই রয়েছে যারা একটি নাটকের ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করেন। কম টাকা দিয়ে তো আসলে ভালো কাজ হয় না। আমার কাছে মনে হয় চ্যানেলগুলো এ বিষয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর টিভি চ্যানেলের মালিকদেরও বুঝতে হবে তাদের ব্যবসা কিন্তু শিল্প নিয়ে। আর শিল্প নিয়ে ব্যবসা কিন্তু সব সময় হয় না। এছাড়া শিল্পকে দাঁড় করাবার জন্য কিছু মানুষকে ছাড় দিতে হয়। বিনিয়োগের জায়গায় এক ধরনের শিথিলতা দরকার হয়। শিল্প নিয়ে সব সময় বাণিজ্য করা আসলে ঠিক নয়। আশাকরি সামনে ভালো দিন দেখা যাবে।

কখনও কি বড় পর্দার জন্য একটু এক্সপেরিমেন্ট করার কথা মনে হয়নি?

মিথিলা: আমি আসলে নিজেকে এখনও অত বড় ভাবতেই পারি না। আমি সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছি কিন্তু আরও আগেই। আমি আসলে বড় পর্দার জন্য তৈরি হয়েছি কিনা, এটাও একটা প্রশ্ন। হয়তো হয়েছিও, আমি জানি না। কিন্তু এখন পর্যন্ত মনের মত সেরকম কোন চিত্রনাট্য কিংবা চরিত্র পাই নি। বড়পর্দায় অভিনয় তো অনেক বড় বিষয়।

পেশাগত ব্যস্ততা আর অভিনয়, কখন কি মনে হয়- ‘ধুর! অভিনয় থেকে খানিকটা লম্বা বিরতি নিই?’

মিথিলা: আমার তো অভিনয়ের ক্ষেত্রে কাজের মধ্যে লম্বা বিরতি থাকেই। তবে ঈদের সময় একটু হাঁপিয়ে যাই। সে হিসেবে আমি তো অভিনয়ের দিক থেকে বিরতিতেই থাকি। ঈদের আগে একটু প্রেশার হয়ে যায়। তবে আমি ঈদ ভেবেই কাজগুলো করি। এরপর তো আর থাকবে না। বাকি সময় আমি আমার চাকরি, বাচ্চা ও ব্যক্তিজীবন নিয়েই থাকি।

একটি ভালো সিনেমা কিভাবে আপনার দর্শনবোধকে প্রভাবিত করে?

মিথিলা: একটা ভালো সিনেমা শুধু আমার দর্শনবোধ কেনো, একটা জাতির দর্শনবোধকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ ভিজুয়্যাল মিডিয়া অনেক স্ট্রং হয়। অনেক ইনফ্লুয়েনসিয়াল হয়। একটা মূল্যবোধকে মানুষের কাছে নিয়ে যায়। আমার কাছে সেদিক থেকে মনে হয় একটা জাতির মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে।

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একজন অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো মানুষ থাকেন। আপনার জীবনে তিনি কে?

মিথিলা: এখন আমাকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার মানুষ আমার মেয়ে। কারণ আমি এমন একজন মানুষ হতে চাই, যে মানুষটার দিকে তাকিয়ে আমার সন্তান গর্ববোধ করবে। যাতে আমার সন্তান বলতে পারে আমি আমার মায়ের মতো হতে চাই। ওর ভাবসাব এমনই যে ও ওর মায়ের মতো হতে চায়। যে মানুষটা আমাকে আরও ভালো একজন মানুষ হতে সহায়তা করছে।

আপনার জীবনবোধটা ঠিক কেমন?

মিথিলা: আমি সিম্প্লিসিটিতে বিশ্বাস করি। আমি এক্সট্রা অর্ডিনারি কোন লাইফ চাই না। আমি অনেক ফেইম চাই না, টাকা পয়সা চাই না। আমি চাই একটা সিম্পল লাইফ সেখানে সম্মান থাকবে, ভালোবাসা থাকবে, শান্তি থাকবে।

জীবন তো আপনাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে, মূল শিক্ষাটা কী?

মিথিলা: আমার প্রফেশনটা এমন, আমি কাজ করছি শিশুদের জন্য। যেসব মানুষদের নিয়ে কাজ করি তাদের থেকে আমি এটা শিখেছি যে, পৃথিবীতে টাকা, পয়সা, ডিগ্রি, ফেইম এগুলো কিচ্ছু না। জীবনে সিম্পিসিটিটাই সব। সুস্থভাবে বেঁচে আছি, মানুষকে ভালবাসতে পারছি এটাই বড় বিষয়। জীবনের শান্তি ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনাদের (তাহসান-মিথিলা) বিয়ের ১০ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেল। এত বছরের দাম্পত্য জীবন কেমন?

মিথিলা: প্রথমত আমি আমার দাম্পত্য জীবন নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না। আমি একটা বিষয় বিশ্বাস করি মানুষের একটাই জীবন। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে ভালো সময় থাকে, খারাপ সময় থাকে। আমি আমার ভালো সময়টাকে যেভাবে উপভোগ করি, খারাপ সময়টাকেও সেভাবে উপভোগ করার চেষ্টা করি। মানে যদি কষ্টে থাকি, আমি সেই কষ্টটার মধ্য দিয়ে যাই। সেটাকে থামানোর চেষ্টা করি না। কষ্ট, সুখ, দুখ-এগুলো জীবনের একটা অংশ। আমার জীবনের কোন বিষয় নিয়ে অনুশোচনা নেই।

কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে আপনাদের (মিথিলা-তাহসান) দাম্পত্য জীবনে নাকি ব্যাপক টানাপোড়েন চলছে?

মিথিলা: কে কি বললো ওগুলো নিয়ে আমি একদমই ভাবি না। মানুষের কথা শোনার সময় আমার নেই। তারা তো কত কথাই বলবে! আমার লাইফ একটা রুটিনে চলে। আমি আমার কাজ আমি করে যাচ্ছি। আমি শুধু সবাইকে এটাই বলব, আমার যদি কিছু বলার থাকে আমরা সোচ্চার হয়ে সবলভাবে বলব। কেনো লুকোছাপার কিচ্ছু নেই। এ নিয়ে এতো মাথাব্যথার কোনো কারণ নেই। যাদের বিষয়ে কথা হচ্ছে, আমার মনে হয় মাথাব্যথাটা তাদেরই হওয়া উচিত। বাকি মানুষদের এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা না করলেও চলবে। তাদের (তাহসান-মিথিলা) যদি কিছু বলার থাকে, যখন সময় হবে তারাই সব বলবে। যখন সময় হবে কি সত্যি না মিথ্যা সেটা সবাই জানতে পারব। আমি এমন একটা মানুষ যে ফেইক একটা লাইফ লিড করতে পারি না। আর কোনো মিথ্যার আশ্রয়ে আমি এমনিতেও থাকব না।

প্রকাশ :জুন ২১, ২০১৭ ৮:৪৬ অপরাহ্ণ