নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়মিত ও জেল আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শিগগিরই শুরু হচ্ছে হাইকোর্টে। ইতিমধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে। বিজি প্রেস থেকে চলতি সপ্তাহে এই পেপারবুক সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছাবে বলে শনিবার (৬ মে) জানিয়েছেন হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ। পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটি শুনানি করার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকছে না বলেও জানান তিনি।
মো. সাব্বির ফয়েজ বলেন, ‘পেপারবুক প্রস্ততের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য এর নথি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রধান বিচারপতি অনুমোদন দিয়ে হাইকোর্টে যে বেঞ্চে পাঠাবেন সেখানেই এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ‘
সাত খুন মামলায় নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে নথি। এ ছাড়া এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির নিয়মিত ও জেল আপিল শুনানির জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
প্রধান বিচারপতি এ মামলা দ্রুত শুনানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেন। এরপর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা থেকে পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য মামলার সব নথি বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। এরপরই বিজি প্রেস পেপারবুক প্রস্তুত করে। প্রস্তুতকৃত পেপারবুকটি প্রায় ছয় হাজার পৃষ্ঠার বলে সূত্র জানিয়েছে।
সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে নূর হোসেন, তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন, মাসুদ রানা, এমদাদুল হক (হাবিলদার), বেলাল হোসেন, আবু তৈয়ব, শিহাব উদ্দিন, এসআই সুনেন্দু বালা, পূর্ণেন্দু বালা, আসাদুজ্জামানূর, মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান বিপু, আবুল বাশার ও রহম আলী হাইকোর্টে নিয়মিত আপিল ও জেল আপিল দায়ের করে।
গত ১৬ জানুয়ারি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্ত তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় মৃত্যৃদণ্ড দিয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন রায় দেন। এ মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ১১ জন এখনও পলাতক।
গত ২২ জানুয়ারি ১৬৩ পাতার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই দিনই পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি, জুডিশিয়াল রেকর্ড, সিডিসহ বিভিন্ন নথিপত্র (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পৌঁছে দেয় বিচারিক আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত ব্যক্তি। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে তাদের মধ্যে ছয়জনের লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। এ ঘটনার একদিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয় আসামির নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।
সূত্র : বাসস