২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:০৬

রসিক নির্বাচন : বার্ষিক আয় বেশি করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ঝন্টুর

রংপুর প্রতিনিধি:

নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে ঋণ বেশি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার। আর বার্ষিক আয় বেশি করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু। জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার বার্ষিক আয় সবচেয়ে কম। এরশাদের ভাতিজা মেয়র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ারের ব্যাংকঋণ না থাকলেও ব্যক্তিগত ঋণ আছে ১০ লাখ টাকা। আর অপর প্রার্থী সাবেক পৌরমেয়র এ কে এম আবদুর রউফ মানিকের কাছে বর্তমানে নগদ টাকা আছে মাত্র এক লাখ। গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত হলফনামা সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বিএনপি প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা বিএ পাস। তার দু’টি মামলা থাকলেও তাতে বেকসুর খালাস পান তিনি। তার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে ৫০ হাজার, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে দুই লাখ চার হাজার এবং ব্যবসা থেকে ১৩ লাখ টাকা আয় হয় তার। অন্য দিকে তার কাছে নগদ টাকা আছে দুই লাখ, ব্যাংকে জমা আছে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা। দু’টি জিপ ও একটি কারও আছে এই প্রার্থীর। আছে দু’টি ফ্যাট, একটি বাড়ি ও দুই ভরি স্বর্ণ। এই প্রার্থীর কৃষি জমি আছে দুই হাজার ৭৫০ একর। অকৃষি জমি আছে ১ দশমিক ৪ একর। তার নিজ নামে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ঋণ আছে আট কোটি এবং যৌথ নামে সোনালী ব্যাংকে ঋণ আছে ৪২ কোটি টাকা।

অন্য দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সদ্য বিদায়ী মেয়র সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু বিকম পাস। চারটি মামলা থাকলেও তাতে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। তার কোনো কৃষি জমি নেই।

তিনি হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন, ৪৫ লাখ ৯৩ হাজার ১৪০ টাকা। এর মধ্যে মেস ভাড়া থেকে পান ৭৫ হাজার টাকা, স্ত্রীর ব্যবসায় থেকে পাঁচ লাখ ৭১ হাজার টাকা, তার ওপর নির্ভরশীল ছেলের চাকরি থেকে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ৫০০, মেয়র সম্মানী থেকে ১১ লাখ চার হাজার, ছেলের ভবন ভাড়া থেকে ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৪০ টাকা। অন্য দিকে বর্তমানে তার নিজ নামে নগদ টাকা আছে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫৭ টাকা, স্ত্রীর নামে ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৩৮ টাকা, নির্ভরশীলের নামে ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকা। এ দিকে তার নামে ব্যাংকে আছে তিন লাখ ৪৪ হাজার ২৪ টাকা, স্ত্রীর নামে চার লাখ ৫০ হাজার ৬২ টাকা এবং নির্ভরশীলের নামে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৩৩৮ টাকা আছে। এ ছাড়াও শেয়ার হিসেবে নিজ নামে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৩৩ টাকা এবং নির্ভরশীলের নামে পাঁচ লাখ টাকা আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্য দিকে পোস্টাল ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আছে নিজ নামে দুই লাখ, নির্ভরশীলদের নামে ১৭ লাখ টাকা। তার নির্ভরশীলের নামে একটি প্রাইভেটকার, নিজ নামে দুই ভরি, স্ত্রীর নামে ছয় ভরি এবং নির্ভরশীলদের নামে ১৩ ভরি স্বর্ণ, নির্ভরশীলদের নামে দশমিক ৬০৫ একর কৃষি জমি এবং ০৩ কাঠা অকৃষি জমি আছে। অন্য দিকে তার নিজ নামে দশমিক ৮ একরের উপর মেস, দশমিক ০৩৬৯ একরের ওপর নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক ভবন, নির্ভরশীলের নামে দশমিক ০৭ একরের ওপর মেস, দশমিক ০২৩৪ একরের ওপর বাণিজ্যিক ভবন এবং স্ত্রীর নামে দশমিক ০৩ একরের ওপর তিনতলা বাড়ি আছে। ঝন্টুর ঋণ আছে ৯ লাখ টাকা।

এ দিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাও বিএ পাস। তার বার্ষিক আয় তিন লাখ ৬৪ হাজার ২৭২ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ৭২ হাজার এবং ব্যবসায় থেকে দুই লাখ ৯২ হাজার ২৭২ টাকা আয় আসে তার। হলফনামায় দেয়া তথ্যানুযায়ী বর্তমানে নিজ নামে নগদ টাকা আছে সাত লাখ ৫০ হাজার, স্ত্রীর নামে আছে ২০ হাজার টাকা। আর ব্যাংকে জমা আছে নিজ নামে এক লাখ ৫০ হাজার, স্ত্রীর নামে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আছে একটি মোটরসাইকেলও। তার নিজের নামে কোনো স্বর্ণ না থাকলেও স্ত্রীর স্বর্ণ আছে ১০ ভরি। নিজ নামে ১৬ শতক এবং স্ত্রীর নামে ৬ শতক জমি আছে। এ ছাড়াও জনতা ব্যাংকে তার নামে ১৫ লাখ টাকা ঋণ আছে বলে হলফনামায় জানান তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক পৌরমেয়র এ কে এম আবদুর রউফ মানিকও বিএ পাস। তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ১১ হাজার ৬৯৮ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি, ফ্যাট ও দোকানভাড়া থেকে পান পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ৭০১ টাকা, ব্যবসায় থেকে চার লাখ ৩১ হাজার ৯৭ টাকা, শেয়ার বন্ড থেকে এক লাখ ৫০ হাজার এবং স্ত্রীর শিক্ষকতা থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। তার কাছে নগদ টাকা আছে নিজ নামে এক লাখ এবং স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা আছে নিজ নামে পাঁচ লাখ, স্ত্রীর নামে ৪০ লাখ ২৪ হাজার ৯৩৯ টাকা। তার একটি প্রাইভেট কার আছে। এ ছাড়াও নিজ নামে এক ভরি ও স্ত্রীর নামে চার ভরি স্বর্ণও আছে তার। তার অকৃষি জমি আছে ৩২ শতক। কৃষি জমি নেই। চার তলাবিশিষ্ট একটি ও একটি টিনেশড বাড়ি আছে তার। আট লাখ টাকা ঋণ আছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এইচএসসি পাস। তার নামে কোনো মামলা নেই। তিনি বার্ষিক আয় করেন সাত লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাড়িভাড়া থেকে ৩৫ হাজার, ব্যবসায় থেকে সাত লাখ টাকা। তার ব্যাংকে আমানত আছে ৮৩১ টাকা। বর্তমানে তার কাছে নগদ টাকা আছে পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার ৬২১ টাকা এবং ব্যাংকে জমা আছে ২৪ হাজার ১২৬ টাকা। তার ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৯ টাকা মূল্যের একটি জিপগাড়ি এবং স্ত্রীর নামে স্বর্ণ আছে ২০ ভরি। এ ছাড়াও তার নামে দশমিক ০৪০৮ একর, দশমিক ০৬৪২ একর, দশমিক ০৫০০ একর, দশমিক ০০৭৫ একর অকৃষি জমি এবং একটি সেমিপাকা বাড়ি আছে। তার ব্যক্তিগত ঋণ আছে ১০ লাখ টাকা।

নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী, হলফনামায় দেয়া তথ্যনুযায়ী অনুসন্ধান চালিয়ে বা অভিযোগ হলে অনুসন্ধান করে সম্পদ কম বেশি হলে নির্বাচিত হলেও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে নির্বাচন কমিশন। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্বাচিত হওয়ার পরও তার মেয়র পদ বাতিল হতে পারে।

আগামী ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয়বারের মতো এই সিটির ভোট। ১৯৬টি কেন্দ্রের এক হাজার ১৭৭টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার তিন লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ ভোটারের মধ্যে রয়েছেন পুরুষ এক লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী এক লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়েছিল।

দৈনিক দেশজনতা /এন আর

[contact-form][contact-field label=”Name” type=”name” required=”true” /][contact-field label=”Email” type=”email” required=”true” /][contact-field label=”Website” type=”url” /][contact-field label=”Message” type=”textarea” /][/contact-form]
প্রকাশ :নভেম্বর ২৩, ২০১৭ ৯:২৫ অপরাহ্ণ